কাঙাল হরিনাথ, (১৮৩৩-১৮৯৬) সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বাউল গান রচয়িতা। তাঁর প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, কিন্তু কাঙাল হরিনাথ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ১৮৩৩ সালে নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার কুমারখালি গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবে স্থানীয় ইংরেজি স্কুলে হরিনাথের লেখাপড়া শুরু হয়, কিন্তু আর্থিক কারণে তা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। ১৮৫৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামের সাধারণ পরের বছর তাঁরই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহন করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি নিজেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। হরিনাথের জীবনে কখনও সচ্ছলতা ছিল না, তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের দমনমূলক মুদ্রণ নীতির কারণে কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হয়।
১২৯০-১৩০০ বঙ্গাব্দের মধ্যে তিনি কাঙাল ফিকিরচাঁদ ফকিরের গীতাবলী নামে ১৬ খন্ডে বাউল সংগীত প্রকাশ করেন। হরিনাথ শুধু গানেই নয়, গদ্য ও পদ্য রচনায়ও পারদর্শী ছিলেন। হরিনাথের মোট গ্রন্থ ৪০টি। তাঁর লেখা বিজয় বসন্ত ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ একই বছরে প্রথম বাংলা উপন্যাস হিসেবে প্রকাশিত হয়, যদিও আলালের ঘরের দুলাল-ই প্রথম বাংলা উপন্যাস হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।
কাঙালের বাড়িটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়। এর পাশে পাকা, ওপরে করোগেটেড টিনের ছাদ। এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক অধিগ্রহন দূরের কথা সংরক্ষিতও ঘোষণা করা হয়নি। তবে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষিত-এমন একটি টিনপ্লেটে ক্ষুদ্র একটি সাইনবোর্ড মূল ভবনের সম্মুখে দেখা যায়- যার লেখা অস্পষ্ট এবং টিনপ্লেটটি পোকায় খাওয়া কাঁথার অবয়ব নিয়ে দেয়ালের সাথে সেঁটে আছে। তবে এই মহাপুরুষের দরিদ্র উত্তরাধিকারীগণ পরম যত্নে কাঙালের মুদ্রণালয়ের কাষ্ঠ নির্মিত মুদ্রণ যন্ত্রটি সংরক্ষণ করে চলেছেন। তাঁরা কাঙালের ঘরে বসবাসও করেন না। যে কোনো পর্যটককেই তাঁরা সম্মানের সাথে গ্রহন করেন এবং কাঙাল এর স্মৃতি দর্শনে সহায়তা করেন।
এ জাতীয় আরো খবর ....