রিয়াজুল ইসলাম সেতু : ঘুুর্ণিঝড় আম্পান কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বজ্রপাতের কারনে গতকাল রাত ১০ টার সময় জেলার বটতৈল এলাকার স্থাপিত জাতীয় গ্রীডের ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই আগুন মুহুত্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পুরো সাবস্টেশনে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভানো চেষ্টা চালায়। আগুনের তিব্রতা বেশি হওয়ার কারনে জেলার মিরপুর, কুমারখালী এবং পার্শবর্তী ঝিনাইদহ থেকেও ফায়ার সার্ভিসের কমীরা এসে আগুন নেভানো কাজে সহযোগীতা করেন। প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টির কারনে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা করার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও কুষ্টিয়া সহ তিনটি জেলা বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে পড়ে।
পরে কুষ্টিয়া জেলায় দুইদিন ধরে অন্ধকারের ভিতরে বসবাস করেছে কুষ্টিয়াবাসী। বিদ্যুতের কারণে অনেকে অসহায় হয়ে পড়েছেন। রান্না, গোসল ও বাথরুমের কাজে পাচ্ছে না পানি সাধারণ মানুষ চরম দুভোর্গে সৃষ্টি হয়।
কুষ্টিয়া জেলারেল হাসপাতালেও রোগীরা অন্ধকারের মধ্যে সেবা প্রদান করেছেন ডাক্তার ও নার্স। তবে উক্ত হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও চলছিল না সেটা। তাই রোগীরা মোমবাতি নিয়ে ছিল রোগীদের স্বজনরা।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতির হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি এবং উপড়ে পড়েছে গাছপালা। তবে জেলায় কোনও প্রাণহাণির ঘটনা ঘটেনি। বিপর্যস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ মে) আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদীতে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (সদস্য সেবা) প্রকৌশলী খন্দকার জসীম উদ্দীন জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গ্রিডের আওতায় দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ২ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলা বিদ্যুৎ ছিল না। পরে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৩ উপজেলার কিছু এলাকা বাদে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। সদর উপজেলায় ১০টি ফিডারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬টি ফিডার চালু হয়েছে। আশা করি শুক্রবারের মধ্যে বাকিগুলো চালু করা সম্ভব হবে। তবে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতেও কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বুধবার রাত ১০ থেকে বৃহস্পতিবার (২১ মে) ভোর ৫টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় তুমুল ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। এতে প্রাণহানির না হলেও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণের কাজ চলছে।