কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে জমি রেজিষ্ট্রির ঘটনায় বাদী এম এম এ ওয়াদুদের দায়ের করা মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের নামে মামলা দায়ের করলেও এখনও ১২জন এজাহারভুক্ত আসামী ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এই জালিয়াতির ঘটনায় নতুন নতুন নাম বের হয়ে আসছে। শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের পাশে এম এম ও ওয়াদুদের মায়ের নামে থাকা ৪৪ শতক জমির মধ্যে ২২ শতক জমির ক্রেতা মিরপুর উপজেলার কাটদহচর গ্রামের মহিবুল ইসলাম গ্রেফতারের আগে জানিয়েছেন এই জমি মূলত ক্রয় করিয়েছেন শহরের বড়বাজার এলাকার বেঙ্গল হার্ডওয়ারের মালিক মহিবুল ইসলাম। জমি ক্রয়ের ৭৭ লক্ষ টাকাও তিনিই দিয়েছিলেন। তার নামে কেন ক্রয় করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন এই জমি পরে মহিবুল তার নামে করে নেওয়ার কথা তাকে জানিয়েছিলেন। পেশায় রাজা মেটাল ইন্ডাঃ নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুবাধে বড়বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিবুলের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তবে জমির ক্রেতা মহিবুলের দাবি তিনি এসব প্রতারনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানতেন না।
অনুসন্ধানকালে হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন জমির ক্রেতা মহিবুলকে তিনি টাকা ধার দিয়েছিলেন। তিনি এসবের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এই জমির দখল নিতে আপনি বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ কেন করেছেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদত্তুর দিতে পারেন নি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন প্রতারনার অভিযোগ আছে। তিনি প্রতারনার মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বড়বাজারের অনেক ব্যবসায়ী।
শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ের ঐ জমির মালিক এম এম এ ওয়াদুদ জানিয়েছেন, শুধু এই জমি নয় তার পরিবারের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে আসছিলো প্রতারক চক্রটি। এই চক্রের সাথে অনেকেই জড়িত রয়েছে। যারা আটক হয়েছে তাদের ব্যাপক জিঙ্গাসাবাদ করলে এই চক্রের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে পুলিশ। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করছি, আপনার এই চক্রের শিকড় তুলে ফেলুন। তানাহলে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক চক্র অনেক নিরীহ মানুষকে পথে বসাবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বড়বাজারের ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম এই চক্রের বিনিয়োগকারী বলে সংবাদ প্রচার হচ্ছে তাহলে তাকে কেন এজাহারভুক্ত আসামী করেন নি প্রশ্ন করলে এম এম এ ওয়াদুদ জানান, আমার পরিবারের ৬ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি, সরাসরি জমি দখল ও যাদের নাম প্রাথমিকভাকে আমি জানতে পেরেছি তাদের নামই এজাহারে দিয়েছি। এজাহারের বাইরেও আরো অনেককেই আছে যারা এই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। আটককৃতদের জিঙ্গাসাবাদ করলেই পুলিশ তাদের নাম পেয়ে যাবে। আমি মনে করি এই দায়িত্বটা তাদেরই। ওয়াদুদ জানিয়েছেন এই বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর পুলিশ সুপারসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। আমি প্রত্যাশা করি এই প্রতারক চক্রের সকল সদস্য আটক হবে এবং আমি ন্যায় বিচার পাবো।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানিয়েছেন, প্রতারনার সাথে যারা জড়িত তাদের ৬ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই মামলার অগ্রগতি রয়েছে। এই প্রতারনার সাথে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।
গত শুক্রবার থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই প্রতারনার সংবাদ প্রচারের পর জেলাজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করছেন সাধারণ মানুষ।