ঢাকা অফিস : করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বাধ্যবাধকতায় শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা দর্শনের সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে দুর্গা পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা আরতির পর পূজা মণ্ডপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে দেশের সব মণ্ডপের আয়োজকদের।
আগে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টা পর্যন্ত মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এখন সেই সময় আরও কমিয়ে আনা হল।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বুধবার বলেন, “সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘর থেকে বের হলেই যেন মাস্ক পরে সবাই।
“আমরা সেই সতর্কবার্তা অনুসরণ করছি। আইইডিসিআর, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সবাই যখন করোনাভাইরাসের নতুন ওয়েভ নিয়ে আতঙ্কের কথা বলছেন, তখন আমরা পূজার আয়োজন সঙ্কুচিত করছি। আমরা বলছি, সন্ধ্যা আরতির পরই আমরা মন্দির বন্ধ করে দেব।”বাংলাদেশের পূজার রীতি অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দর্শনার্থীরা রাতেই প্রতিমা দেখতে বের হন। নতুন এ ঘোষণায় এবার সেই উৎসবে ভাটা পড়বে।নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, “এবার আমরা সাত্ত্বিকমতে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছি। উৎসবের আগে তো মানুষের জীবন।”
এ বছর সারাদেশে তিন হাজার ২১৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, যা গতবারের তুলনায় এক হাজার ১৮৫টি কম। এছাড়া ঢাকা মহানগরে এবার মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩২টি, যা গত বছর ছিল ২৩৮টি।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন শুক্রবার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর সোমবার মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
মহামারীর মধ্যে এ বছর সবাই যেন যার যার অবস্থানে থেকে ঘরে বসেই পূজা অর্চনা ও আরাধনা করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকার মহানগর কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ থেকে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পূজার দিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অঞ্জলির অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল।
এছাড়া মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেরশ্বরী জাতীয় মন্দিরের ফেইসবুক পেইজ থেকেও অঞ্জলির অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।
নির্মল চ্যাটার্জি জানান, দশমীর দিন শোভাযাত্রা না করে প্রতিটি মণ্ডপ থেকে সরাসরি নিজ নিজ ঘাটে গিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবার।
মহামারীর কারণে অষ্টমী তিথিতে এবার রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে কুমারী পূজা হবে না। মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শাস্ত্র বলছে, “রবৌ সোমে গজরূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়ৌঃ৷ দোলায়ঞ্চ গুরৌ শুক্রে, নৌকায়ং বুধবাসরে৷”
অর্থাৎ, দুর্গার গমনাগমন যদি রবি বা সোমবার হয়, তাহলে তার বাহন হয় গজ বা হাতি ৷ আবার শনি বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে বা ঘোড়ায় ৷
কিন্তু বৃহস্পতি বা শুক্রবার যদি দুর্গার গমনাগমন ঘটে তাহলে তিনি দোলায় বা পালকিতে যাতায়াত করেন ৷ আর সেটা বুধবার হলে তার বাহন হয় নৌকা ৷
এবার সপ্তমী শুক্রবার হওয়ায় হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী দুর্গা এবার আসবেন দোলায় চেপে। আর সোমবার দশমীতে কৈলাসে দেবালয়ে ফিরবেন হাতির পিঠে চড়ে।
দোলায় আগমন নিয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’; অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরার প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে।
এ বিষয়ে হিন্দু শাস্ত্র বলছে, ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’। অর্থাৎ, দেবী পালকিকে চড়ে মর্ত্যে এলে তার ফল হয় বহু মৄত্যু ৷ তা হতে পারে মহামারী, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরার প্রভাবে।
আর হাতিতে চড়ে দেবী বিদায়ের ফল হয়- ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’ ৷ অর্থাৎ তাতে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয় ৷ সুখ সমৄদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয় মর্ত্যভূমি ৷