রিয়াজুল ইসলাম সেতু, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামী মাদ্রাসা শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। চারদিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে আজ কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে বিচারক দেলোয়ার হোসেনের এজলাসে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক এ জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে পালিয়ে যেতে বুদ্ধি দেওয়ার কথা শিকার করেছেন তারা।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, তিনি মাদ্রাসা ইবনে মাসউদ কুষ্টিয়াতে হেফজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের সাথে সরাসরি জড়িত আবু বক্কর ওরফে মিঠুন ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাদিহ একই বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনার দুইদিন আগে ইউসুফসহ মিঠুন ও নাহিদ কুষ্টিয়ার মার্কেটে যায়। যাওয়া আসার পথে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টি তাদের নজরে পড়ে। এরপর গত শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার সাথে আবু বক্কর ও নাহিদের যুক্ত থাকার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। পরে তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে নিজ নিজ বাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ভাংচুরের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ তাদেরকে দেখালে অভিযুক্ত দুজনকে চিনতে পারার পরেও তিনি স্বীকার করেননি।
অপর শিক্ষক আলামিন জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন শিক্ষক আল আমিনসহ ওই মাদ্রাসায় সবাই মোবাইল ব্যবহার করত। মোবাইলে তারা ওয়াজ (বয়ান) শুনতো। বিশেষ করে মামুনুল হক হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী সহ অন্যদের ওয়াজ শুনতো। এই মাদ্রাসা শিক্ষকও একইভাবে অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে সরে যেতে পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে সিসিটিভিতে ধারণ করা ফুটেজ নিয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি সত্য চেপে যান।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জানিয়েছেন, অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা শিক্ষক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা ছাত্রের জড়িত থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তা প্রকাশ করেননি। উল্টো তাদেরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। জবানবন্দী শেষে সন্ধায় দুই শিক্ষককে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভাষ্কর্য ভাংচুরের সাথে সরাসরি জড়িত একই মাদ্রাসারা দুই ছাত্রের ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষ হবে আগামীকাল।
উল্লেখ্য, ৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ৭ ডিসেম্বর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।