আরাফাত হোসেন, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয়ে বিপ্লবী বাঘ যতিনের ভাষ্কর্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি টাকার অভাবে- বলেছেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুনার রশীদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনার পর সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য মিটিং করার চিন্তা চলছিল। এরই মধ্যে ঘটলো এ ঘটনা।
গত ৫ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙচুরের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষে বিশেষ সভা করে জেলার যেখানে যেখানে আবক্ষ মুরাল বা ভাষ্কর্য আছে তার নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট সংকল প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয়- স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান ভাষ্কর্য বা মুরালের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা এবং পাহারার ব্যবস্থা করবে। কয়া মহাবিদ্যালয়ে বাঘা যতিনের ভাষ্কর্যে আঘাতের পর কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের কাছে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি জানতে চান। এসময় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুনার রশীদ বলেন, ভাষ্কর্যের নিরাপত্তায় মিটিং করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে গেল এ দুর্ঘটনা। আসলে মিটিং করেও কোন লাভ হতো না, সিসি ক্যামেরা বসাতে যে অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থান নেই মহাবিদ্যালয়ের- বলছিলেন অধ্যক্ষ। এদিকে মহাবিদ্যালয়ের নাইট গার্ড খলিলুর রহমান বলেন, রাত ১২টার পর আমি তিনটি আঘাতের শব্দ শুনে রাস্তার দিয়ে দৌড়ে যাই, দেখতে পাই দুটি মোটর সাইকেল রাস্তার দুই দিকে চলে যেতে। এরপর ভাষ্কর্যে আঘাতের চিহ্ন দেখতেই পাই। রাতেই বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানাই। স্যার সকালে আসেন।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনার রশীদ ও নাইট গার্ড খলিলুর রহমানকে কুমারখালী থানায় নিয়ে গেছে।
বাঘা যতীন
১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে মাতুতালয়ে জন্ম নেন যতীন্দ্র মুখোপাধ্যয়। পাশের জেলা ঝিনাইদহের সাধুহাটির বিষখালী গ্রামে বাবার বাড়ি হলেও কয়া গ্রামেই বেড়ে ওঠেন যতীন। যুবক বয়সেই গ্রামের জঙ্গলে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে হাতে থাকা পিতলের বদনা দিয়ে আঘাত করে বাঘকে পরাস্ত করেছিলেন যতীন। এরপরই নাম হয়ে যায় বাঘা যতীন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে যতীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নামেন। তিনি মাত্র ৪জন কিশোর যোদ্ধা নিয়ে প্রথম ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নামেন। উড়িশ্যার বালেশ^র বুড়িবালামের তীরে ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওই যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন বাঘা যতীন। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর নিজেই শরীরের ব্যান্ডেজ খুলে দেন। এসময় ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হন। তিনি বলেন, শরীরে এতো রক্ত। সব আজ দেশ মাতৃকার জন্য দিয়ে দিলাম। এরপরই মারা যান বাঘা যতীন। বাঘা যতীনের দেশপ্রেমের এই স্মৃতি বয়ে বেড়ান কয়া গ্রামের মানুষ।
এরই প্রেক্ষিতে কয়া মহাবিদ্যালয়ে বাঘা যতীনের ভাষ্কর্য স্থাপন করে কুমারখালী উপজেলা পরিষদ। ভাষ্কর্যটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর।
দেশব্যাপী ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঘত ৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙচুর করে দুই মাদ্রাসাছাত্র। এর দুই সপ্তাহ পরে কয়া ঘটলো বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাষ্কর্ষে আঘাতের ঘটনা।
কুষ্টিয়ার কয়ায় বাঘা যতীনের ভাষ্কর্য-এ আঘাতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন। এখানে কেন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়নি? এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেন। তিনি এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল ভাষ্কর্য সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক।