ঢাকা অফিস : করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনেক প্রত্যাশার টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে পৌঁছেছে; প্রতিবেশীর জন্য উপহার হিসেবে ভারত সরকার এই টিকা পাঠিয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা পৌঁছে যাওয়ায় দ্রুতই দেশে টিকাদান শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ২০ লাখ ডোজ টিকার এই চালান নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত, ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ তারই নজির।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল টিকা বুঝে নিতে উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তারাও।
বিমানবন্দর থেকে দুটি ফ্রিজার ভ্যানে করে টিকার বাক্স নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁওয়ে ইপিআই স্টোরেজে। ‘ভ্যাকসিনমৈত্রীর’ আকাশী রঙের ব্যানারে ঢাকা সেই ভ্যানের গায়ে আঁকা ছিল দুই দেশের পতাকা, লেখা ছিল- ‘ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য উপহারস্বরূপ ভারতে উৎপাদিত ২০ লাখ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, টিকার চালান বুঝে নিতে বিমানবন্দরে থাকবেন তিনি। তবে পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিমানবন্দরে যাচ্ছেন না মন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ আক্কাস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ৭-৮ জন কর্মকর্তা বিমানবন্দরে আছেন।
“কাস্টমস এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টিকা আনা হবে তেজগাঁওয়ে ইপিআই স্টোরেজে। সেখান থেকে কিছু টিকা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হবে। সেখানে উপহার গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।”
এই ফ্রিজার ভ্যানে করে বিমানবন্দর থেকে টিকা নিয়ে রাখা হয়েছে ইপিআই স্টোরেজেএই ফ্রিজার ভ্যানে করে বিমানবন্দর থেকে টিকা নিয়ে রাখা হয়েছে ইপিআই স্টোরেজেবাংলাদেশ সরকারিভাবেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুরুতে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা হলেও টিকা আগে পাওয়ায় প্রয়োগের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগ শুরু করতে চান তারা।
“প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেওয়া হবে। আমরা প্রথম দিন এরকম ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। আমরা কাজ করছি এই ২০-২৫ জন কারা হবেন।”
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টিকাদান উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
প্রথমে যে টিকা দেওয়া হবে, তা হবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য সেবা সচিব।শুরুর ৫০ লাখ টিকার অর্ধেকই বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য উপহারের টিকা নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি এসেছে মুম্বাই থেকে।
আবদুল মান্নান বলেন, “প্রথমদিন টিকা দেওয়ার পরদিন ড্রাই রান বা টেস্ট হিসেবে এই টিকা দেওয়া হবে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব। আমরা দেখব টিকা নেওয়ার পরে তাদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কি না।”
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে সারাদেশে টিকা বিতরণ শুরু হবে। সরকারের কেনা টিকা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে সেরাম ইন্সটিটিউটের ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। আর ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হবে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব।
গণটিকাদান শুরুর আগে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হবে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের কেনা ও ভারতের উপহারের টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে। সব মিলিয়ে এই টিকা দেওয়া যাবে ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষকে।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, “দেশের অন্তত আট থেকে নয় কোটি মানুষকে যেন টিকা দেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়. তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। আমাদের মাইক্রো প্ল্যানে এই ৮০ শতাংশ মানুষকেই টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।”
“তাই মোট ৫ কোটি ১০ লাখের মানুষের পরেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আরও টিকা আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে আমি অত্যন্ত আশাবাদী, আগামী জুন জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং এটা অ্যাভেইলেবল হয়ে যাবে।”