কুমারখালী প্রতিনিধি: ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। একটি পবিত্র এই শহীদ মিনারটি ব্যবহারের নাম অবৈধ জায়গায় দখল করে করছেন শহীদ মিনার। যা বাংলাদেশের জন্য লজ্জিত। আজ কাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনিচ্ছা থাকলেও জোর করে নির্মাণ করা হচ্ছে শহীদ মিনার।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাষ্ট্রীয় ইমেজ ব্যবহার মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে কৌশলে শহীদ মিনার নির্মাণ কুষ্টিয়ায় জোরপূর্বক মুক্তিযোদ্ধা ও তার শরীকদের জমি দখল করে শহীদ মিনার নির্মানের অভিযোগ উঠেছে বাঁশগ্রাম ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কৌশলগতভাবে জমি হাতিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় ইমেজ ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে। অদৃশ্য প্রভাব খাটিয়ে অবৈধকে বৈধ করতেই এমন পরিকল্পনা। বিদ্যালয়টির নিজেস্ব জায়গা থাকলেও শহিদ মিনারটি তৈরী করা হচ্ছে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার জায়গার উপর।
জমি দখলের এমন কৌশল এর আগে কখনও ঘটেনি। সুশিল সমাজ মনে করছেন রাষ্ট্রীয় ইমেজ ব্যবহার করে ভবিষ্যতে জমি দখলের পথ সুগম করলো একটি মহল। এটা এখনি প্রতিহত করতে না পারলে এমন ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানেও ঘটতে পারে। সুত্রে জানা যায়, জমি ফেরত পেতে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবুও থামেনি দখল দারিত্ব। অবৈধভাবে দখলকৃত জমি পাকাপোক্ত করতে আবার নির্মান করা হচ্ছে শহীদ মিনার।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয়নি। ভাষা শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা ও তার শরীকদের জমি দখলের ঘটনায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়। মামলা সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর থানাধীন বাঁশগ্রাম মৌজার এস এ ১৩৮ নং খতিয়ানের ২৪ নং দাগের .২৫ একর জমি সহ মোট ৪.০৯ একর জমি আব্দুস সালাম, আফসার উদ্দীন, আব্দুল মজিদ ও সাইদুর রহমানের। গত ২৬ জুলাই ২০১৪ ইং তারিখে .১৬ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে বাঁশগ্রাম ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিজেদের সম্পত্তি দখলদারদের হাত থেকে বাঁচাতে আদালতের স্মরনাপন্ন হয় ভুক্তভোগীরা। যে মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমনকি গত ২১ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে স্থিতীবস্থা বজায় রাখার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। তবুও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দখলকৃত জমি পাকাপোক্ত করতে নির্মান শুরু করা হয়েছে শহীদ মিনার। এ বিষয়ে মামলার বাদী ও ওয়ারেশ সূত্রে জমির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামীম রেজা জানান, আমাদের সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক দখল করে রাখা হয়েছে। আমরা আদালতে মামলা করেছি, মামলা চলমান রয়েছে এবং এই জমির উপর আদালতের নিষেজ্ঞাও রয়েছে। তবুও প্রভাব খাটিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থায়ী দখলের উদ্দেশ্যে জমির উপর শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা এই সকল দখলদারদের শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।
ওয়ারেশ সূত্রে জমির মালিক আসিব ইকবাল বলেন, জোরপূর্বক আমাদের জমি দখল করা হয়েছে। আবার এই জমির দখল পাকাপোক্ত করতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা এর ক্ষতিপূরণসহ দোষীদের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। এ বিষয়ে মামলার বিবাদী বাঁশগ্রাম ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি রাজি হননি।
উল্লেখ্য যে, উক্ত স্কুলে বৈধ জায়গা থাকা স্বত্বেও অবৈধভাবে নির্মাণ করছেন শহীদ মিনার।