ঢাকা অফিস : বুধবার সকাল ৯টার দিকে তারা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করলে নিউ মার্কেট-আজিমপুর সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও অধ্যক্ষদের এক সভায় সাত কলেজের সব পরীক্ষা ২৪ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিকভাবে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার পর বুধবার সকালে আবার অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা রুটিন অনুযায়ী চলমান পরীক্ষা নেওয়াসহ আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
‘পরীক্ষা নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’,‘চলমান পরীক্ষা নিতে হবে নিতে হবে,‘সাত কলেজের পরীক্ষা নিতে হবে নিয়ে নাও,’ ‘ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা নিতে হবে নিতে,’ ‘দাবি মোদের একটাই-মার্চে হল-ক্যাম্পাস খোলা চাই,’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আবু বকর বলেন, “হঠাৎ করে চলমান পরীক্ষা স্থগিত খরে দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করছে। চলমান পরীক্ষাসমূহ রুটিন অনুযায়ীই নিতে হবে। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে।”
ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন,”আমাদের ফোর্থ ইয়ারের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই পর্যায়ে এসে পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ২০১৯ সালে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা এখনও আটকে আছে। আমরা আর কত সেশনজটে পড়ে থাকব? আমরা আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তায় আছি।”
এদিকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ‘জরুরি সভা’ ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়কসহ সাত কলেজের অধ্যক্ষরা এ ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত থাকবেন বলে মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন ।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হলেও আবাসন সঙ্কটে থাকা শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।
রোববার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তার আঁচ লাগে। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলের প্রধান ফটকের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এরপর শিক্ষার্থীরা ১ মার্চের মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
সোমবারই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। এর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। ২৪ মে পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পরীক্ষা নিতে পারবে না। ২৪ মের পরে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। আর অনলাইনে যেভাবে ক্লাস চলছে, ওই সময় পর্যন্ত সেভাবেই চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো আগামী ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে।
তার এই ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষার্থীদের জন্য ১৩ মার্চ থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। একইসঙ্গে পরীক্ষার রুটিনও বাতিল করা হয়।
হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের দুই সপ্তাহের প্রস্তুতির সময় দিয়ে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
তার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের চলমান পরীক্ষাগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে।
পরে মঙ্গলবার বিকালে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সভায় সব পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধিভুক্ত সাত কলেজের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে ক্রম অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এর আগে যেসব পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেসব পরীক্ষাও ২৪ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।