বিশেষ প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে দ্রুত গতিতে ড্রাম ট্রাক। শহরের ৪ লক্ষ ২৩ হাজার আটশত আঠারো জনের বসবাস। এ ছোট শহরে একমাত্র প্রবেশ পথ মজমপুর গেট। এ গেটে সকাল রাত অবধি পর্যন্ত চলছে ছোট বড় যানবাহনসহ সাধারণ মানুষসহ স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক সময় দেখা যায় যাতায়াতের রাস্তায় বালু পড়ে থাকায় সৃষ্টি ধুলার কারখানা। অনেকে নাকে কাপুড় দিয়ে চলতে বাধ্য হয় সাধারণ জনগণ। এতে পাঁকা সড়কটি যেমন আরও বেহাল হয়েছে, তেমনি ধুলায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দাদের।
শীত বিদায়ের পর মৌসুমের এই সময়টায় এমনিতেও প্রকৃতি বেশ শুষ্ক থাকে। দিনের বেলায় যখন সড়কটি দিয়ে বালুবাহী ট্রাক যায়, তখন ধুলায় চারপাশ ঢেকে যায়। সম্প্রতি এই সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস ধরে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও ট্রলি বালু বহন করে। এসব বালু আনা হয় গড়াই নদীর ধার থেকে।
কয়েকজন পথচারী জানান, এখান থেকে শহরসহ বিভিন্ন স্থানে বালু নিয়ে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা তার রয়েছে অসংখ্য ড্রাম ট্রাক। তবে পৌরসভার এ ব্যাপারে নেই কোন পদক্ষেপ। পানি ছিটালেও কথা থাকলেও সেটা কোনদিন দেখা সম্ভব হয়নি। এ সড়কটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় মধ্যে দিয়ে গেছে।‘রাস্তা কোনো দিয়া ধুলার তকনে হাঁটা যায় না। যখনে বালুভর্তি বড় বড় ট্রাক যায়ছে, মনে হওছে ধুলার মেঘ উড়াওছে। নাক-মুখ ঢাকি যাওয়া আইসা করলেও গাও ধুলাতে নেটপেটা (মেখে যাওয়া) হয়া যায় বলে জানান পথচারী।
ড্রাম ট্রাকগুলো শহরের দিনের বেলায় চলাচল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ থাকায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের অন্ধকারে দ্রুত গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অভিযোগ করেন এখান ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাত ১১ টার সময় এক পথচারী রাস্তা পার হবার সময় অপর দিকে আসা একটি ড্রাম ট্রাক দ্রুত গতিতে এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ঘটনাস্থলে ও পথচারী মৃত্যুবরণ করেন।
সম্প্রতিক বেশকিছু দিন আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় এক শিশু নিহত হয়। পরে এলাকাবাসী সংক্ষুদ্ধ হয়ে রাস্তায় অবরোধ করেন এবং তিনটি ড্রাম ট্রাক আটকিয়ে রাখে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে একজন ব্যবসায়ী বলেন মজমপুর গেটে ট্রাফিক অফিস থাকা স্বত্বেও তারা কিভাবে দ্রুত গতিতে চালায় তা তার জানা নেই। রাতে নেই কোন ব্যবস্থা। রাতে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় পেতে হয়, কখন না যেন চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সমস্ত ড্রাম ট্রাক ঝড়ের বেগে চলাচলের কারণে তাদের অন্ধকার করে দেওয়া বালি ঝড়ে ও ধূলাবালির কারণে সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করতে খুবই আতংকিত হয়ে থাকেন। বালু বহনকারী ড্রাম ট্রাকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ করার সাহস নেই।
যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের বহুকাঙ্খিত সেতু ও ফসলি জমি। ১০ চাকার ট্রাম ট্রাকের কারনে ভাঙছে পাকা রাস্তা। একইসাথে বাড়িঘর ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন রাস্তার দুইধারের বহু পরিবার।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, বালি কাটার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলতে গেলেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারেননি ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, মহা-সড়কের জন্য চলাচলের অনুমোদন প্রাপ্ত ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক কিন্তু এই ড্রাম ট্রাক গ্রামের কাচা বা পাকা রাস্তায় চলাচলের কোন অনুমতি নাই।
সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে ড্রাম ট্রাকে বহন করে রাস্তায় চলাচল করছেন প্রতিদিন। এজন্য রাস্তার অনেক অংশে ভেঙ্গে ও দেবে যাচ্ছে। যেখানে ছোট ছোট বালি যানবাহন এই রাস্তার জন্য অনুপোযোগী, কিন্তু সে রাস্তায় পরিবহনে স্থানীয় মাস্তানদের ম্যানেজ করে ১০ চাকার ট্রাম ট্রাক চালাচ্ছেন। অনেকেই আবার দলীয় পদ বলে এসব ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
বিষয়ে ট্রাফিক অফিসের টিআই ওলিউর রহমান জানান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রাস্তায় ড্রাম ট্রাক চলাচল করা নিষেধ আছে। যদিও দিনের বেলায় পৌরসভার কাজে দুই একটি গাড়ী অনুমতি নিয়ে যায়। দ্রুত গতির বিষয়ে তিনি বলেন রাতে ড্রাম ট্রাকগুলো দ্রুত গতিতে চালালে নেওয়া হবে আইনী পদক্ষেপ।