রিয়াজুল ইসলাম সেতু, কুষ্টিয়া : খুব ভালো নেই কাঙ্গালিনী সুফিয়া, রোগে শোগে আক্রান্তে লড়াই করছেন তিনি। অর্থের অভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন ওষুধ কিনতে। বিছানাগত হয়ে দিন দিন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে তাকে। সরকার থেকে যে অনুদান পান তা দিয়ে কিছুই হচ্ছে না তার। ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে গানের গলা হারিয়ে গেছে তার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়ার কিছু নেই, আরেকবার তাকে শেষ দেখা দেখতে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া বাংলাদেশের একজন প্রসিদ্ধ লোকসঙ্গীত শিল্পী। কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই, পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে, নারীর কাছে কেউ যায় না, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া প্রভৃতি গানের জন্য তিনি বিখ্যাত। কাঙ্গালিনী সুফিয়া ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল টুনি হালদার। বাবার নাম খোকন হালদার ও মা টুলু হালদার।
সঙ্গীত জীবনে গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে তিনি তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুধির হালদার নামের একজন বাউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যদিও সে বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৮ সালে। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তার গুরু দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত। তার প্রিয় শিল্পী লালন ফকির, আব্দুল আলীম।
সুফিয়ার মোট রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তিনি রাজ সিংহাসন চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক ডিজি মুস্তাফা মনোয়ার তাকে কাঙ্গালিনী উপাধি প্রদান করেন। তারপর থেকে তিনি সুফিয়া খাতুন থেকে দেশব্যাপী কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামে পরিচিত হন।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া লোকসঙ্গীত শিল্পী তাজা সংবাদকে বলেন আমি বেশ কিছু দিন ধরে হার্ট,প্রেসার, কিডনী, ও ব্রেনসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে আছি। দেশে মহামারী করোনা ভাইরাস আসার পর থেকে আমাদের দলের গান বাজনা বন্ধ। তাই তার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই ওষুধ কেনার মত। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা অনুদান পেলেও সেটা আগের থাকা দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে আমার শেষ ইচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে যেন শেষ বারের মত দেখেন হয়বা এটাই শেষ দেখা হতে পারে।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার মেয়ে পুষ্প হালদার তাজা সংবাদকে বলেন আমার মাকে একমাত্র দেখা শোনা করতে হচ্ছে। আমার মায়ের ঔষুধ কেনার মত অর্থ তার কাছে নেই। ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানির ভিতরেই এই অসুস্থ মাকে নিয়ে তিনি অনেক কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। আমার মা বেঁচে আছে তবে কেউ মূল্য দিচ্ছে না হয়তবা মরে গেলে মূল্যদিবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা তাজা সংবাদকে বলেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া একজন দেশের সম্পদ। তিনি একজন অনেক বয়স্ক মানুষ। তাকে মাঝে মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে অসুস্থতার কথা তার জানা নেই, খোঁজ খবর নিয়ে তাকে ওষুধ কেনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।