এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট : পুরোনো কাঁচি,বটি,চাকু কিংবা দাঁ ধার(শান) দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করাই তার কাজ। গ্রামের ভাষায় ধার করা(শান দেওয়া) কাজে ব্যবহার করা এই মেশিনের নাম শান মেশিন। নিজের তৈরি এই শান মেশিনে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এবং বিভিন্ন হাট বাজারে গত ৩৫ বছর ধরে গিয়ে শান দেওয়ার কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার একজন ষাটোর্ধ বয়সের ভূমিহীন আমিরুল ইসলাম। এই কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই অনেক কষ্টে পরিবারের ভরণ পোষন চলে তার। শেষ বয়সে এসে বসবাস করতে হচ্ছে ছেলের কেনা জমিতে। তাও আবার দুর্বিষহ অবস্থা। নেই মাথাগোঁজার ভাল ঠাইটুকুও। তবুও নিরুপায় হয়ে সেখাইনেই বাস করছেন। আমিরুল ইসলাম উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ভূল্ল্যারহাট ডাঙ্গাপাড়া ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত ছমির উদ্দিন পাইকারের ছেলে। তার নিজের বলতে কিছুই নেই, ছেলের জমিতে একপাশে ঘর করে রাত্রি যাপন করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে কালীগঞ্জ বাজারে দেখা যায়, আমিরুল শান দেওয়া মেশিনটির চাকা সাইকেলের প্যাডেল পা দিয়ে সজোরে ঘুরিয়ে শান দিচ্ছে। এতে একটি পাথরের প্লেট সজোরে ঘুরাতে হচ্ছে তাকে। ঘূর্ণায়মান ওই পাথরের প্লেটের কার্ণিশে লোহার চাকু,দা ও কাঁচি স্পর্শ করলে ঘর্ষণে ধার উঠে যায়। এসময় ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকিও বের হয়। এই আগুনের ফুলকি ছিটকে আসে , যা শরীর ও চোখের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে দুই পায়ে প্যাডেল ঘোরানোর কাজ খুবই পরিশ্রমের। শরীর না কুলালেও জীবিকার তাগিদে তাকে শান দেওয়া মেশিনের প্যাডেল ঘোরাতে হচ্ছে।
এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে কখোনো স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাল্যকাল হতেই জীবিকার তাগিদে পরের ক্ষেতে কামলা(দিন হাজিরায়) খেটে সংসারে আয় উপার্জণ করতে হয়েছে। যখন ২৫ বছর তখন থেকেই একটি শান দেওয়া মেশিন কাটের ফ্রেমে তৈরী করে শুরু করেন গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজারে গিয়ে মরচে ধরা পুরানো কাচি,দা ও চাকুতে ধার ওঠানোর কাজ। পরে পুরাতন বাইসাকেল কিনে সেটাতে শান দেয়ার পাথর সেটিং করে ৩৫ বছর ধরে সেই মেশিনেই চলছে এ কাজ। প্রতিদিন গড়ে ১৫০/২৫০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই চলছে পরিবারের ভরন পোষণ। সংসারে আমিরুলের দুই ছেলে এক মেয়ে আছে। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখনও তাকে এই বয়সে এসে জীবিকার তাগিদে শান দেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে।তিনি বলেন, আমি একজন ভূমিহীন মানুষ। এই বয়সে এসে শান দেয়ার কাজ করতে ইচ্ছে করে না। অন্য কোন কাজও জানা নেই। মরার আগ পর্যন্ত শান দেওয়ার কাজ করে বাঁচতে হবে। সারাদিন কাজ করে বাড়িতে যাই কিন্তু শান্তি মতো ঘুমানোর অবস্থা নাই বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী যদি দয়া করে একটা ঘর দিতো শান্তিতে ঘুমানোর অন্তত একটা ব্যবস্থা হতো।