এস.আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট : জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্যগড্ডিমারী গ্রামের আরমান আলীর স্ত্রী পেয়ারা খাতুন তার ছেলে হত্যার মূল আসামীকে গ্রেপ্তারের দাবী করে লালমনিরহাট পুলিশ সুপারের নিকট একখানা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ১০ই মে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোজা সেখ এর ছেলে মিজানুর রহমান মিজান পেয়ারা খাতুনের ছেলে পিপাস বাবুকে বাড়ী থেকে মোটর সাইকেলে তুলে সানিয়াজান নদীর চরে নিয়ে যায়। এদিকে একই সময় মৃত ভাজন মন্ডলের ছেলে জসিম পেয়ারা খাতুনের স্বামী আরমান আলীকে বড়খাতা বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় ঐ চরেই। সেখানে আগে থেকেই মফিজুল ও মিজানের বাড়ীতে পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা রাজন, নাজেম, মফিজুল, জসিম ও মিজান সহ ঐ বাবু হত্যার আসামীগণ আরমান ও বাবু মোটর সাইকেল থেকে নামার সাথে সাথে হিংস্র প্রাণীর মত আক্রমণ করে সকল আসামী মিলে ধারালো অস্ত্র ও মাছ মারা ঠেটা দিয়ে আরমান ও পিপাস বাবুকে গুরুতরভাবে রক্তাক্ত জখম করে। ঠেটার আঘাতে পিপাস বাবুর মাথার মগজ বেরিয়ে যায়। এরপর তাদের দুজনকে প্রথমে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, পরে বাবুর অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। গত ১৩ মে সকাল ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিপাস বাবু মারা যায়। উপরোক্ত মূল আসামীরা কুখ্যাত সস্ত্রাসী ও প্রভাবশালী হওয়ায় রহস্যজনক কারণে উপরোক্ত আসামীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না বলে বাদী ও এলাকাবাসীর দাবী। নিহত বাবুর পিতা আরমান আলীর সাথে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, উক্ত আসামীরা আমাদের ২ একর ৬৬ শতক বৈধ সম্পত্তি জবর দখল করে খাচ্ছে। উক্ত জমির আমরা আদালতে রায় পাই, তারপর ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ উক্ত জমি লাল নিশান গেরে আমাদের দখল দিয়ে যায়। পরে আবার উক্ত জমি আসামীরা পুনরায় সন্ত্রাসী কায়দায় জবর দখল করে খাচ্ছে। এছাড়াও অন্য অন্য মালিকের জমিসহ উক্ত সন্ত্রাসী ও ভূমি দস্যুরা মোট ১০ একর মানুষের বৈধ জমি, কোন কাগজপত্র ছাড়াই জোরপূর্বক দখল করে খাচ্ছে। যাহার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। মূলত: এ হত্যা কান্ড ঘটার মূল কারণ এই সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য। আরমান আলী আরও জানায়- আসামীরা এই মামলা প্রতিরোধ করার জন্য, নাটকীয় ভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করে আবার আমাদেরই বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি যে
সম্পূর্ণ মিথ্যা তাহা সঠিক তদন্ত করলে সব রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে আরমান আলী জানান। তার প্রমাণ ১০ তারিখের ঘটনা দেখিয়ে ১১ তারিখে তাকে ভর্তি করে, ১২ তারিখে বাড়ীতে নিয়ে আসে। আবার ১৪ তারিখে তাকে সুকৌশলে হত্যার উদ্দেশ্যে মেডিকেলে ভর্তি করে, নাটকীয়ভাবে নিজেরাই হত্যা করে আমাদের নামে সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আরমান আরও বলেন, আমাকে ও আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে মেডিকেলে পাঠায়। আমরা কোন রকম মারামারির ঘটনা করি নাই। সেখানে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে তাহার মামলা নং-১৫/১২৫। মৃত বাবুর মা পেয়ারা খাতুন বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছেন তাহার নং-সি/আর-৯০/২১, ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩২৬/৩৫৪/৪২৭/৩০২/৫০৬(২)/১৪৯/১১৪ দন্ডবিধি। উক্ত নিহত বাবুর হত্যা মামলার মূল আসামীদের আইনের আওতায় আনার জন্য লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত বাবুর মা পেয়ারা খাতুন। অভিযোগখানা পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় ওসি হাতীবান্ধা থানাকে সঠিক ভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত মামলা বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল আলম জানান পেয়ারা খাতুন গত ১৯ আগস্ট জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সে ব্যাপারে মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় আমাকে সঠিক তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন। আমি উক্ত মামলাটির সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সঠিক তদন্ত হলে প্রতিবেদনটি আদালত বরাবর প্রেরণ করব।