আরাফাত হোসেন, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত মুক্তিপর্ণ আদায়ে জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুলকে হত্যার অভিযোগে ৪ জনকে আমৃত্যু ও ৪জনকে সাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অর্থ দন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ দুপুরের দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মোঃ তাজুল ইসলাম আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন। রায় প্রদান শেষে পুলিশের কঠোর পাহারায় তাদেরকে জেলাকারাগারে প্রেরণ করা হয়।
আমৃত্যু সাজা প্রাপ্ত আসামীরা হলেন দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর এলাকার কামাল হোসেন এর ছেলে ওয়াসিম রেজা (পলাতক), ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাটদাহ গ্রামের আলী জোয়ার্দ্দারে মানিক জোয়ার্দ্দার (পলাতক), দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের মৃত নুরু বিশ^াসের ছেলে হোসেল রানা।
সাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামীরা হলেন মিরপুর উপজেলার বালিদাপাড়া মশান গ্রামের খোরশেদ আলীর ছেলে ইদ্রিস ওরফে মোটা জসিম (পলাতক), খন্দকার রবিউল ইসলামের ছেলে খন্দকার তৈমুল ইসলাম বিপুল (পলাতক), নুর বিশ^াসের ছেলে ফারুক চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মতিমিয়া রেলগেট চৌড়হাস এলাকার খন্দকার মোছাদ্দেক হোসেন মন্টু এর ছেলে উল্লাস খন্দকার, উদিবাড়ী আমিরুল ইসলামের ছেলে মনির (পলাতক), পূর্ব মজমপুর মৃত আব্দুল খালেক চৌধুরীর ছেলে বিপুল চৌধুরী, দৌলতপুর উপজেলার পচা ভিটা গ্রামের মৃত মোজাহার মোল্লার ছেলে আঃ মান্নান মোল্লাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত থাকায় আরও ৬জনকে বিভিন্ন মেয়াদে আদেশ দেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায় জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুল ঢাকা মহানগরীর মিরপুর এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং স্কুল এর মাকেটিং ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিল। বিগত কয়েকমাস যাবত সুমী নামে এক মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সুযোগকে কাজে লাগান সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা। ২০০৯ সালে অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখে বিকাল পাঁচটার সময় জাহাঙ্গীরকে বিভিন্নভাবে প্রলোভিত করে অপহরণ করে দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামে ডেকে আসেন তারা এবং জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যদেরকে অপরিচিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে ছাড়াতে হলে ৫লক্ষ টাকা মুক্তিপর্ণ দাবী করে। পরে মুক্তিপণের দাবীকৃত টাকা পেলে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে রাতের বেলায় উপরোক্ত আসামীগণরা জাহাঙ্গীর হোসন মুকুলকে চর শালিমপুর হিসনানদীর পাড়ে ফারুক চেয়ারম্যানের জমিতে আনিয়া সাক্ষ্য প্রমাণ গোপন করার লক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখেন।
এ বিষয়ে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে দৌলতপুর থানায় তার বড় ভাই ইলয়াচ কবির বকুল বাদী হয়ে ১৬জন আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩১ মার্চে তদন্তকারী কর্মকর্তা দন্ডবিধির ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এ মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন। বাকি দুই আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়।
প্রকাশ থাকে যে, উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলা আছে বলে আদালত জানায়।