স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশের ইতিহাসে জেলা পর্যায়ে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালে এই প্রথম বারের মতন ২০ দিনের নবজাতকের মাথায় সফলভাবে ব্রেনের অক্সিপিটাল মেনিনগোসিল (মাথার পেছনের অংশের টিউমার) অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। যার ওজন ছিল ২.৫ কেজি। মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ জাহিদ রায়হানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল টিম ২ ঘন্টার চেষ্টায় এই অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ইন্টার্ন ডাক্তার। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ রয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামের ভ্যানচালক বসির ও রেবেকা দম্পতির ঘরে কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১৯ মার্চ তারিখে তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়। গর্ভ থেকেই শিশুটি ব্রেনের অক্সিপিটাল মেনিনগোসিল (মাথার পেছনের অংশের টিউমার) নামক টিউমারে আক্রান্ত ছিল। ভ্যানচালক পিতা বসির শিশুটিকে ৯ তারিখ কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা প্রথমে শিশুটির চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানান। কিন্তু ভ্যান চালক পিতার অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে ডা. মোহম্মদ জাহিদ রায়হান ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করতে রাজি হন। কারন এ ধরনের অপারেশন করতে হাইকেয়ার অপারেশন থিয়েটার এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সুযোগসুবিধাসহ যন্ত্রপাতি লাগে, যা বাংলাদেশের কোন জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে বিদ্যমান নেই।
রেবেকা খাতুন (শিশুটির মা) বলেন পেটের ভিতর শিশুটি টিউমার হয়েছিল। এর পপুলার নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহম্মদ জাহিদ রায়হান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এর তার আর্থিক সংকটের কথা ভেবে ঐ শিশুটিকে অপারেশন করেন চিকিৎসক। তার বাচ্চা ভালো হলে, সদরে অপারেশন ভালো হয় বলে জানান এ মা।
বসির উদ্দিন (শিশুটির পিতা) বলেন গরীব মানুষের জন্য এ চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। এতে বাইরে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন হত। এত টাকা আমাদের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব হত না।
শিশুর আত্মিয় বলেন আল্লাহর তালার কাছে তাদের ভরসা ছিল। দিন মজুরী হওয়া চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। অপারেশনের পরে এ শিশু সম্পন্ন সুস্থ আছেন।
হাসপাতালে নার্স বলেন এই ধরনের চিকিৎসা করতে যেকোন বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয় । কিন্তু কুষ্টিয়া হাসপাতালে এই শিশুটির অপারেশন করতে মাত্র ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ আছে।
ডা. মোহম্মদ জাহিদ রায়হান বলেন এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ জাহিদ রায়হান বলেন এধরনের অপারেশন জেলা শহরে চ্যালেঞ্জিং। তিনি আরও জানান শিশুটির অপারেশন সফল হয়েছে এবং শিশুটি সুস্থ আছে। এদিকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান কুষ্টিয়া হাসপাতালে ইতিমধ্যেই ব্রেইন টিউমার সহ মেরুদÐের অপারেশন নিয়মিত হচ্ছে। সুযোগ সুবিধা বর্ধিত হলে রাজশাহী বা ঢাকায় নয় বরং কুষ্টিয়ায় এসব রোগীদের আরও সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন কোনো কোনো শিশুর জন্মের পর মাথার পেছনে বা পিঠের নিচের দিকে কোনো একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। এ নিয়ে অভিভাবকেরা আতঙ্কে ভোগেন ও বিপাকে পড়েন। এটি ভ্রূণের অঙ্গসংগঠনজনিত একটি স্নায়ু সমস্যা। এই ফোলা অংশের ভেতর স্নায়ু বা স্নায়ুরস থাকলে তাকে মেনিনগোসিল বলা হয়।