নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফারের বিরুদ্ধে পরীক্ষা কেন্দ্রে বদলি পরীক্ষার্থী বসিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও উত্তীর্ণ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বদলি শিক্ষার্থী নজিপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সাজিউল ইসলাম সাজু। ২০২২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তিনি এ অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সচেতন মহল; যা এলাকায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এদিকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের অসুদপায় অবলম্বন করে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় তার অর্জিত একাডেমিক সনদ বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে গত ৯ মে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন পত্নীতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা শাহ চৌধুরী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর গৌতম চন্দ্র দে এবং দুলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
তারা অভিযোগের অনুলিপি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী, সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, শিক্ষা সচিব, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, বাউবির আঞ্চলিক পরিচালক, দুদকের সহকারী পরিচালক, পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন, কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গাফফার।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে পত্নীতলা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (৩৪১) কেন্দ্রে আব্দুল গাফফার নিজে অংশ না নিয়ে নজিপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক সাজিউল ইসলাম সাজুকে বদলি পরিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে সব পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেন। যার আইডি নম্বর-২০-০-১০-৩৪১-০১৭, ব্যাচ-২০। এই পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৪৫ পয়েন্ট পেয়ে আব্দুল গাফফার উত্তীর্ণ হন।
বদলি শিক্ষার্থী নজিপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সাজিউল ইসলাম সাজুর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি কারো পরিবর্তে পরীক্ষা দেইনি। আমি যেহেতু উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকি এ কারণে মানুষ আমার নাম বলে থাকতে পারে।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার বলেন, আমি নিজেই পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কিছু ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজনুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি কেন্দ্র পরিদর্শনে যাইনি। বর্তমান পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. রুমানা আফরোজ বলেন, আমি অভিযোগের একটি অনুলিপি পেয়েছি। উপজেলায় আমি নতুন হওয়ায় এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদি হাসান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।