বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর। আয়তনের দিক থেকে জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা হওয়ায় এটি কুষ্টিয়া-১ সংসদীয় আসন। একটি উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন হলেও এখানকার সরকার বা বিরোধী দলের রাজনৈতিক অবস্থা দ্বিধা বিভক্ত। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দ্বিধা বিভক্ত দৌলতপুর আওয়ামী লীগ এখন তিনভাগে বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি’র অবস্থা প্রায় একই। দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে ঘরোয়া অথবা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় বসে সরকার বিরোধী কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করে থাকেন দলের নেতৃত্বদানকারী দৌলতপুর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। তবে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মধ্যে দৃশ্যমান কোন বিভক্তি না থাকায় একক নেতৃত্বেই চলছে দৌলতপুর জাতীয় পার্টি। তবে সরকার দলীয় বা বিরোধী দলীয়
রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের বিভক্তি প্রকাশ্য হওয়ার পাশাপাশি দৌলতপুরের সার্বিক উন্নয়নও গতানুগতিক ধারাতেই রয়েছে। গ্রামাঞ্চলেরর কিছু সড়ক নির্মান বা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ ছাড়া দৌলতপুরবাসীর চোখে পড়ার মত দৃশ্যমান ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন লক্ষ্যনীয় নয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক ছাত্র নেতা এ্যাড. আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হোন। নির্বাচনের আগে তিনি বেশ কিছু দৃশ্যমান ও উল্লেখযোগ্য কাজের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেড়ামারার রায়টা হতে ফিলিপনগর হয়ে মেহেরপুর মুজিবনগর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মানের। যে লাইন দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ সহজেই রেলপথ যোগে মেহেরপুর মুজিবনগর ও ভেড়ামারা হয়ে দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু তা প্রতিশ্র“তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এছাড়াও ভেড়ামারা-প্রাগপুর সড়ক চারলেনে উন্নীত করা, প্রাগপুর স্থলবন্দর নির্মাণ করা, ফিলিপনগরে ষ্টেডিয়াম এবং কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খলিসাকুন্ডিতে বিনোদন পার্ক নির্মান উল্লেখযোগ্য। এরকম বেশকিছু দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যার একটিও আলোর মুখ দেখেনি। ভবিষ্যতে এসব কাজ হবে কিনা তা নিয়েও দৌলতপুরবাসী সন্দিহান রয়েছেন। তবে তাঁর সময়েই দৌলতপুর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দূর্গম চরে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ হয়েছে। ফলে দূর্গম চরবাসীর ঘরে পৌঁছেছে বিদ্যুতের আলো। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে চিলমারীর সাথে যোগাযোগের জন্য কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে যা বালির বাঁধ হওয়ায় বছর না যেতেই গত বর্ষায় তা প্রায় ধুয়ে মুছে গেছে। ফলে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য ও প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। তবে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোেত বাজারের নীচে পদ্মা নদীতে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রীজ নির্মানের প্রস্তুতি চলছে, ব্রীজ তৈরী হলে চরের মাঝে কাচা রাস্তা গুলো পাকা করার পরিকল্পনা আছে বলে সংসদ সদস্য এ্যাড. আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ জানিয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ দৌলতপুরে উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন করতে না পারলেও দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগ তাঁর দূর্বল নেতৃত্বের সুবাদে এখন তিনভাগে বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। যার একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি নিজেই। যেখানে বিভিন্ন দল থেকে আসা হাইব্রিড আওয়মী লীগ নেতা-কর্মীর অবস্থান রয়েছে। তবে
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই তিনি নেতা-কর্মী শুন্য ও সুবিধাভোগীরাও তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন তিনি। অপর দু’টি অংশের মধ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বের পথ ধরেই দৌলতপুর আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ও সবধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদের কনিষ্ঠ পুত্র দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুনের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্ন ইমেজের আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীরাও সরব রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। ইতোমধ্যে তিনি জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় ও খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগাতে সাবেক এমপি প্রয়াত প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন অনুসারীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুনকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই সে লক্ষ্য নিয়ে মাঠে প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন তিনি।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও নিজের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ক্লিন ইমেজধারী নেতা এ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুন। দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরী এবং দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুনের সুসংগঠিত নেতৃত্বের কাছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ বা সভা সমাবেশ করতে তাঁকে খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা বলেও আওয়ামী লীগ দলীয় সাধারণ নেতা-কর্মীদের অভিমত রয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি কলেজ শিক্ষক মো. মোফাজ্জেল হক বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করার কাজটি অব্যাহত রেখেছেন। এর পাশাপাশি তিনি জাতীয় ও আওয়ামী লীগ দলীয় নানা কর্মসূচীও নিজ খরচে পালন করে থাকেন যা রাজনৈতিক মাঠে বিরল। এসব কর্মকান্ডের ফলে দৌলতপুরের সুশীল শ্রেণীদের মাঝে তাঁর একটা অবস্থানও তৈরী হয়েছে যা আগামী নির্বাচনে কাজে আসবে এমন অভিমত সুশীল সমাজের। এঁদের পাশাপাশি দৌলতপুর আওয়ামী থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোয়ন দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য তারিক আল মামুন ও দৌলতপুর যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। অপরদিকে দৌলতপুর বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত হলেও নির্বাচনের মাঠে তারাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বি। অবাঁধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনটি তাদের দখলে যাবার সম্ভাবনাই বেশী। এখানে দৌলতপুর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লার নেতৃত্বেই দৌলতপুর বিএনপি সুসংগঠিত অবস্থায় রয়েছে। দৌলতপুর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার মঙ্গল ও সাবেক সভাপতি আলতাব হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি’র অপর একটি
অংশ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকলেও নির্বাচনের মাঠে তারা দূর্বল অবস্থানে থাকবে এমন অভিমত বিএনপি দলীয় নেতা- কর্মীদের। এছাড়াও প্রয়াত সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার জামিল জুয়েল কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সে লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখানে জাতীয় পার্টির বিভক্তি না থাকায় দলগতভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক জোট না হলে কেন্দ্রীয় জাসদের জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক ও জাসদ
যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন জাসদ থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জাসদ দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সর্বপরি তিন ভাগে বিভক্ত দৌলতপুর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ না হলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি অন্যের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশী এমন মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। (সূত্র : আন্দোলনের বাজার)